হুট করে কেন ফাহামিদুলকে বাদ ?

ফেসবুকে একটি ভিডিও ক্লিপ ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাংলাদেশ ফুটবল দলের ট্রেনিং চলছে; সেখানে একজন রীতিমতো ডিফেন্ডারদের নাচিয়ে ছাড়ছেন। সেই ‘একজন’ হচ্ছেন ফাহামিদুল ইসলাম।
ফাহামিদুল ইসলাম ইতালির লিগে চতুর্থ টায়ারে খেলেন। চতুর্থ টায়ার শুনলে কারো কারো নাক ছিটকানোর আওয়াজ শোনা যেতে পারে। কিন্তু ইতালির এই চতুর্থ টায়ারের (সিরি ডি) মার্কেট ভ্যালু কতো জানেন? প্রায় ২৫ মিলিয়ন ইউরো!
ফাহামিদুল ইসলাম খেলেন ওলবিয়া কালসিওতে। এই টিমের মার্কেট ভ্যালু প্রায় দেড় মিলিয়ন ইউরো। ১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই টিমের নিজস্ব স্টেডিয়ামও আছে, যেখানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারেন।
আপনি এখন বাংলাদেশের একেবারে টপ লিগের সাথে ইতালির ওই চতুর্থ টায়ারের লিগকে মিলিয়ে দেখুন..
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ভারত ম্যাচকে সামনে রেখে অনুশীলনের জন্য সৌদি আরবে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। সেখানে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের সাথে যোগ দেন ১৮ বছরের তরুণ ফাহামিদুল। সেখানে স্থানীয় ক্লাবের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা হয়। প্রস্তুতি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন তিনি।
সুদূর ইতালি তথা ভিন্ন পরিবেশ, সংস্কৃতি এসে প্রথমবারের মতো জাতীয় দলের স্কোয়াডে যোগ দিয়ে অনুশীলন ম্যাচে হ্যাটট্রিক, খুব সহজ মনে করেন? হোক না অনুশীলন ম্যাচ, দলের অন্যদের সাথে দারুণ বোঝাপড়া গড়ে না ওঠলে হ্যাটট্রিক সম্ভব ছিল না!
ফাহামিদুল মাত্রই তার পথচলা শুরু করেছেন বলা যায়। যদি লেগে থাকেন, পরিশ্রম করেন, তবে ইতালিরই টপ লিগে তার খেলার সম্ভাবনা যে একেবারে নাই, সেটা বলা যাবে না। তিনি দেশকে ভালোবেসেই দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে খেলতে এসেছিলেন।
অথচ বিস্ময়করভাবে ফাহামিদুলকে বাদ দেওয়া হয়েছে! সৌদি থেকেই ইতালিতে ফিরে গেছেন তিনি।
তাকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে কোচ কাবরেরা বলেছেন, ‘সে খুবই প্রতিভাবান ফুটবলার। দলের অন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে দেখা হওয়ায় তাঁর জন্য ভালোই হলো। আসলে সে এখনো তরুণ, বাকিদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাঁর আরও সময় লাগবে।’
ভাইরে, সে প্রতিভাবান; তো তাকে কাজে লাগাবেন না কেন?
সে যদি মানিয়ে নিতে না-ই পারে, তাহলে অনুশীলন ম্যাচে হ্যাটট্রিক করলো কিভাবে? আর দলের সঙ্গে যদি তাকে না-ই রাখেন, তাহলে সে মানিয়ে নেবে কোন ঘোড়ার আন্ডা দিয়ে?
সৌদি আরবে অনুশীলনের জন্য প্রথমে ৩৮ জনের স্কোয়াড দেন জাতীয় দল কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। এরপর সেখান থেকে ছেঁটে ফেলা হয় ৮ জনকে। ৩০ জনের স্কোয়াডে ছিলেন ফাহামিদুল।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপ, অনুশীলন ম্যাচে হ্যাটট্রিক….ফাহামিদুল যে অনুশীলনে মনোযোগী ছিলেন, সেটাই প্রতীয়মান হয়।
তাহলে হুট করে কেন ফাহামিদুলকে বাদ দেওয়া
সৌদিতে অনুশীলনে যাওয়ার আগে প্রাথমিক স্কোয়াড দিয়ে ফাহামিদুলের প্রশংসা করেছিলেন কোচ কাবরেরা। এখন তিনি উল্টো কথা বলেন কেন!
ফাহামিদুলকে দল থেকে বাদ দেওয়ার খবরে ক্ষোভে ফুঁসছেন ফুটবলপ্রেমীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা। তাকে ফেরানোর দাবিতে রাজপথেও নেমে গেছেন কেউ কেউ। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশের ফুটবলে যে ‘সিন্ডিকেট’ বিরাজমান, সেই সিন্ডিকেটের কালো থাবাতেই দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে ফাহামিদুলকে।
জল ঘোলা হচ্ছে অনেক। অথচ আশ্চর্য, দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাফুফে নিরব। ফাহামিদুল ইস্যুতে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য বাফুফের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজী, হামজা চৌধুরীর মতো প্রবাসী ফুটবলার যোগ দেওয়ায় বাংলাদেশ দলের শক্তি বেড়েছে, ভ্যালু বেড়েছে। তাদের আগমন আলোচনার খোরাক জুগিয়ে মৃতপ্রায় ফুটবলে প্রাণের সঞ্চার করেছে।
ফাহামিদুলের সঙ্গে আসলে কি ঘটেছে, আমরা জানি না। তিনি ‘সিন্ডিকেটের ইন্ডিকেটে বলি’ কিনা, তাও রহস্যে ঘেরা। কিন্তু স্পষ্ট বলে দেওয়া যায়, তাকে বাদ দেওয়ার ঘটনা প্রবাসে থাকা প্রতিভাবান ফুটবলারদের চিন্তায় ধাক্কা দেবে, বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলার ইচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করবে।
ফাহামিদুলের বাদ পড়ার বিতর্ক দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে একটা ঝাঁকি দিয়েছে বলা যায়। বাফুফে নিরব থাকলেও ক্রীড়াপ্রেমীদের মনোভাব বুঝতে পেরেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আর তাই মধ্যরাতে তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ বুধবার বিষয়টি নিয়ে বাফুফে সভাপতির সাথে কথা বলবেন তিনি।



পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আহত হয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন