ছাত্র-জনতার উপর গু লি : সিলেটে একদিনে তিন মা ম লা


ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হাসিনা সরকার পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট একদফার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলা-গুলির অভিযোগে সিলেটে একদিনে পৃথক তিন ব্যক্তি মামলা দায়ের হয়েছে। গত ৭ নভেম্বর সিলেটে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় এই মামলাগুলো দায়ের হয়। এরমধ্যে দুই মামলায় প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
মামলা বাদিরা হলেন- গোলাপগঞ্জের কদম রসুলের ধারাবহর এলাকার ইছরাব আলীর ছেলে একলিম উদ্দিন (৩৩), বটরপাড়ার রায়গড় এলাকার তাজ উদ্দিন তাজুলের ছেলে সাকিব আহমদ (২৫) ও দত্তরাইল এলাকার ছাবু আহমদের ছেলে মো. কামিল উদ্দিন (৩২)।
একলিম উদ্দিন মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট ৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সওয়ার হোসেন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান।
রায়গড় এলাকার সাকিব আহমদের মামলার এজহারে উল্লেখ্য করেছেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১ দফা দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-জনতা মিছিল সহকারে ঢাকা দক্ষিণ বাজার থেকে গোলাপগঞ্জ পৌরসভা চৌমুহনীতে যাওয়ার সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা দেশী-বিদেশী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করতে থাকে। এসময় আমার বড় ভাই লিমন আহমদের শরীরে ১টি বুলেট, বাম পায়ে ৩টি বুলেট ও শরীরে ২টি বুলেটের আঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুরুতর অবস্থায় আমার ভাইকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করাই। পরে রাজধানীর ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউরো সাইন্স ও হাসপাতাল, শের-ই-বাংলা নগর হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। সেখানে অপারেশন করে মাথা থেকে গুলি বের করা হয়। এ মামলায় ১৪৪ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৪০-৪৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
সাকিব আহমদের মামলা উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মন্জুর শাফি চৌধুরী এলিম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধালন সম্পাদক রফিক উদ্দিন, সাবেক পৌর মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল।
দত্তরাইল এলাকার কামিল উদ্দিন মামলার এজহারে উল্লেখ্য করেন, আমি একজন রিক্সা চালক। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সমর্থন করি। গত ৪ আগস্ট সকাল ১১ টার সময় ছাত্র জনতা ঢাকাদক্ষিন বাজার বহুমুখী স্কুল এন্ড কলেজের সম্মুখে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচী এবং স্বৈরাচার বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকি। এক পর্যায়ে আসামী আলী আকবর ফখর, আব্বাছ উদ্দিন, রেজভী আহমদ, সুবেদ আহমদ (রুহেল), সেলিম উদ্দিন, শফিক উদ্দিনদের নেতৃত্বে অপরাপর আসামীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে ছাত্র-জনতার উপর হামলা করে। এমনকি এলোপাতাড়ি গুলি করে। এসময় আমার বাম পায়ে বুলেটের আঘাত লাগার কারণে আমি বর্তমানে পশু অবস্থায় চলাফেরা করছি। পরে স্থানীয় গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। পরবর্তী আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আমি পুনরায় ১০ আগস্ট গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু অবস্থার আরও অবনতি হলে ১২ আগস্ট সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। চিকিৎসক আমার বাম পায়ে অপারেশন করেন আমার বাম পা থেকে ২টি বুলেট বের করা হয়। এ মামলায় ৬১ জনের নাম উল্লেখ্য করে ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
কামিল উদ্দিন মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেটে ৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আলী আকবর ফখর, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন।
আপনার মতামত লিখুন