৫–২০ আগস্ট: হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৬৮
       
খুঁজুন                
                               
সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
           

৫–২০ আগস্ট: হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৬৮

কামরান আহমদ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ
৫–২০ আগস্ট: হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০৬৮

দেশে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। আবার এসব হামলাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ভারতীয় মূলধারার কিছু গণমাধ্যমে অনেক অপতথ্যও ছড়ানো হয়েছে। এমনকী গণমাধ্যম ভূমিকা থেকে বেশি প্রকাশ পেয়েছে তাদের নিজ ধর্ম এবং অদৃশ্য কোন সার্থ রয়েছে তাদের। ভারতীয় গণমাধ্যম গুলোর এমন অপ্রচারে মাধ্যমে তারা চায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করার কোন ভূমিকায় দেখাগেছে।
এ প্রসঙ্গ বাদ দেয়া যাক। বলা ছিলাম তাদের সংবাদের মাধ্যমে

বহু মৃত্যুর সংখ্যা বলা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে বাংলাদেশর প্রথম সারির গণমাধ্যম যেমন প্রথম আলো, যুগান্তর, আমারদেশ, ভোরের পাতা, ভোরের ডাক,  আলোচিত এ গণমাধ্যমে শুরু থেকেই বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তা ছিল ঘটনাভিত্তিক, সার্বিক চিত্র নয়। এ কারণে দেশব্যাপী অনুসন্ধান করে সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তথ্য সংগ্রহ করা হয় ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। সংগৃহীত তথ্য পুনরায় যাচাই, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রস্তুতের মধ্যে বিভিন্ন জেলায় শুরু হয় আমাদের অনুসন্ধান । তবে এখনো দেশে ও বিদেশে এসব নিয়ে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিলম্ব হলেও বিভিন্ন জেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলার একটি চিত্র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও বাড়িঘরে, কোথাও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, কোথাও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

হামলা শুরু হয় মূলত গত ৫ আগস্ট বিকেল থেকে। প্রথম দুই দিন হামলার ঘটনা বেশি ঘটে। সারা দেশে থেকে নেয়া ফ্রিডম সিলেটের  প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত অনুসন্ধান চালিয়ে হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১ হাজার ৬৮টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। এর বাইরে হামলা হয়েছে ২২টি উপাসনালয়ে।
সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগে। বিভাগটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৯৫টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। রংপুর বিভাগে ২১৯টি, ময়মনসিংহে ১৮৩টি, রাজশাহীতে ১৫৫টি, ঢাকায় ৭৮টি, বরিশালে ৬৮টি, চট্টগ্রামে ৪৫টি এবং সিলেটে ২৫টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কোথাও কোথাও স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কোথাও কোথাও কম।

নিহত ২
সরকার পতনের পর হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একজন মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি। বাগেরহাটের এই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষককে গত ৫ আগস্ট রাতে মারধর ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আরেকজন খুলনার পাইকগাছা ইউনিয়নের স্বপন কুমার বিশ্বাস। ৮ আগস্ট বাড়ি ফেরার পথে তাঁকে মারধর ও নির্যাতন করে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রাথমিক হিসাব (২০ আগস্ট দেওয়া) অনুযায়ী, ৫০টির বেশি জেলায় দুই শতাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মঙ্গলবার তারা জানায়, বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের পর তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। শিগগিরই সংবাদ সম্মেলনে সেটি তুলে ধরা হবে।

এদিকে,  ইমেরিটাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বলেন,

নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে কোনো ভেদাভেদ করা হবে না।
আবার মুল প্রসঙ্গে আসা যাক,
অন্যদিকে,
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত গত মাসে গণমাধ্যমকে  বলেন, ৫০ বছর ধরে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, সরকারবিরোধী আন্দোলন ও নানা পটভূমিতে সংখ্যালঘুদের টার্গেট (লক্ষ্যবস্তু) করে হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। এসব হামলার মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে সংখ্যালঘুশূন্য করা।

এর আগে সংখ্যালঘুদের ওপর বড় হামলা হয় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময়। তখন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বলেছিল, ওই বছর ১৩ অক্টোবর থেকে ১ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের ২৭টি জেলায় হামলায় ১১৭টি মন্দির-পূজামণ্ডপ ভাঙচুর করা হয়। ৩০১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি হামলা-লুটপাটের শিকার হয়। নিহত হন ৯ জন।

এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যে ১ হাজার ৬৮টি স্থাপনায় হামলা হয়েছে, তার অন্তত ৫০৬টির মালিক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

আমাদের অনুসন্ধান (FSJ) বলছে (৬৪ জেলা ও ৬৭টি উপজেলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তথ্য পেয়েছেন মোট ৪৯ জেলায়। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৪৬টি সরেজমিনে দেখেছেন, যা মোট ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনার ৫১ শতাংশ। বাকিগুলো সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়েছেন। বেশ কিছু জেলায় হামলা হয়েছে ব্যাপকভাবে। কিছু জেলায় সে তুলনায় কম। অন্তত একটি ঘটনা ঘটেছে, এমন হিসাবে হামলা হওয়া জেলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৯। হিন্দুধর্মাবলম্বী ছাড়া হামলা হয়েছে খ্রিষ্টান ও আহমদিয়া সম্প্রদায় এবং ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর। বাংলাদেশ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নওগাঁয় চার্চ অব বাংলাদেশ, দিনাজপুরে ইভ্যানজিলিক্যা হলিনেস চার্চ, নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের কালেকশন বুথ এবং বরিশালের গৌরনদীতে তিনটি, খুলনা শহরে একটি, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে একটি ও পার্বতীপুরে একটি খ্রিষ্টান বাড়িতে হামলা হয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ে নিজপাড়া মিশনে মা মারিয়ার মূর্তি ভাঙা হয়েছে।
ঢাকায় রোমান ক্যাথলিক চার্চের আর্চবিশপ বিজয় নিসফরাস ডি’ক্রুজ বলেন, ‘আমরা এ দেশে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। কিন্তু নানা সময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়। কিন্তু হামলাকারীদের শাস্তি হয় না।’ তিনি বলেন, শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে হামলা বন্ধ হবে না।
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুর, রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওপর অন্তত ১০টি হামলায় অন্তত ১৮টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর অথবা অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জমি দখল ও মাছ লুটের দুটি ঘটনা ঘটেছে। দিনাজপুরে সাঁওতাল বিদ্রোহের ঐতিহাসিক দুই চরিত্র সিধু মুর্মু ও কানু মুর্মুর ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়েছে।
আহমদিয়া সম্প্রদায় জানিয়েছে, পঞ্চগড়, রংপুর, রাজশাহী, নীলফামারী, ঢাকার মাদারটেক, শেরপুর ও ময়মনসিংহে হামলায় তাঁদের ১৩৭টি বাড়িঘর ও ৬টি আহমদিয়া মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহমদিয়া মুসলিম জামাতের জনসংযোগ সম্পাদক আহমাদ তাবশির চৌধুরী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি না, কোনো দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আমার মনে হয়, আমাদের ওপর এবারের আক্রমণ হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সক্রিয় না থাকার সুযোগে।’ তিনি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের আমলেও আহমদিয়াদের ওপর হামলা হয়েছিল।
হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হামলা হয় সরকার পতনের পর ‘বিজয় মিছিল’ থেকে। হামলাকারীদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত এবং কিছু ধর্মীয় সংগঠনের স্থানীয় উগ্র কর্মী ও সমর্থকেরা ছিলেন। তবে ৬ আগস্ট থেকে বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি, জামায়াত, বিভিন্ন ধর্মীও সংগঠন এবং শিক্ষার্থী ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে সংখ্যালঘুদের স্থাপনায় পাহারার ব্যবস্থাও করা হয়। হামলার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্যও দিয়েছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। ১৩ আগস্ট বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের ৪০ জন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করেন ড. ইউনূস। ওই দিন তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনেও যান। সেখানে তিনি বলেন, ‘এমন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাচ্ছি, যেটা একটা পরিবার, এটাই হচ্ছে মূল জিনিস। এই পরিবারের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা, বিভেদ করার প্রশ্নই আসে না। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশি।’

বেশি হামলা খুলনা বিভাগে
খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে। FSJ  অনুসন্ধানে উঠে আসে, বিভাগটির ১০টি জেলার সব কটিতেই সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় সবচেয়ে বেশি (৭৪টি) ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়। এরপর যশোর, সাতক্ষীরা ও মাগুরার সংখ্যালঘুরা বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।
খুলনায় হামলার আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে পালান। যেমন জেলার কয়রা উপজেলার সুজিত রায় বলেন, ৫ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে বাড়িতে হামলা করতে আসছে শুনে তাঁরা বাড়ির সবাইকে নিয়ে আরেক বাড়িতে চলে যান। যেতে যেতেই শুনতে পান তাঁরা ভাঙচুরের শব্দ। তিনি বলেন, ঘরের চাল থেকে শুরু করে আসবাব—সব ভেঙেচুরে দিয়েছে।

যশোর শহরের বেজপাড়ায় ৫ আগস্ট রাতে হামলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই দিন রাত সোয়া ৯টার দিকে ২০-২৫ জন লোক রামদা, লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে হামলা করে।

তারা ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে এবং লুটপাট চালায়।
বেজপাড়ার বনানী সড়কে পরেশ বসুর বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন লক্ষ্মী রানী পাল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হামলাকারীরা লক্ষ্মী রানীর সেলাই মেশিন, রান্নার চুলা, গ্যাসের সিলিন্ডার ও আলমারিতে রাখা তাঁর ভাইয়ের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর গয়না লুট করে নিয়ে যায়। বাড়ির মালিক পরেশ বসুর স্ত্রী লক্ষ্মী বসু গণমাধ্যমকে  বলেন, ঘটনার পর লক্ষ্মী রানী পাল ও তাঁর পরিবারের লোকেরা অন্যত্র চলে গেছেন।

রংপুর, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগ
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হামলা হয়েছে রংপুর বিভাগে। এ বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন বেশি হামলার শিকার হন।
ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের ৭৮টি বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ১৯ থেকে ২১ আগস্ট ঠাকুরগাঁও সদর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন আমাদের গোপন সংবাদাতা । সদর উপজেলার শুকানপুকুরী ইউনিয়নের লাউথুতি গ্রামের কমল বর্মণ আমাদেরকে বলেন, হঠাৎ করেই লোকজন লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। তারা ঘরে যা পেয়েছে, তা লুট করে নিয়ে গেছে।

ময়মনসিংহ বিভাগে হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে ক্ষতির সংখ্যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। বেশির ভাগ হামলা হয়েছে বিভাগটির নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায়। শেরপুর ও জামালপুরে হামলা তুলনামূলক কম।

নেত্রকোনা শহরে গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভান্ডার, দুর্গা মিষ্টান্ন ভান্ডার, উত্তরা হোটেলসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ১৯টি দোকানে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ২৩ আগস্ট সরেজমিনে দেখে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোকানগুলো চালু হয়েছে। তার আগে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সহযোগিতায় খোয়া যাওয়া রেফ্রিজারেটর, আসবাবসহ কিছু মালামাল ফেরতও পাওয়া গেছে। উত্তরা হোটেলের মালিক দেবশঙ্কর রায় FSJ কে বলেন , আর কোনো হামলা হবে না বলে আশ্বাস পেয়ে তাঁরা দুই দিন পর দোকান খোলেন।
রাজশাহী বিভাগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যে হামলা হয়েছে, তা চতুর্থ সর্বোচ্চ। বিভাগটির মধ্যে বেশি হামলা হয়েছে রাজশাহী, বগুড়া ও নওগাঁ জেলায়। রাজশাহীতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ওপরও হামলা হয়। ৫ আগস্ট জেলার মোহনপুর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামে পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের পল্লিতে হামলার ঘটনা ঘটে। ১৭ আগস্ট আমাদের প্রতিনিধি দেখেছেন, অনেকের ঘরের চালা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আগুন দেওয়া হয়েছে তিনটি বাড়িতে। একটি মন্দিরও ভাঙা হয়েছে।

পল্লিটির বাসিন্দা সূর্যি রানী চোখ মুছতে মুছতে  বলেন, হামলা থেকে বাঁচতে তিনি, তাঁর মেয়ে ও স্বামী নদে ঝাঁপ দিয়েছিলেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগ

ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেটে হামলা অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় কম। ঢাকা বিভাগের মধ্যে নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইলে; বরিশালের মধ্যে বরগুনা ও পিরোজপুর; চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ি এবং সিলেট বিভাগে মৌলভীবাজার ও সিলেটে হামলার ঘটনা বেশি।

ঢাকা বিভাগের শরীয়তপুর জেলা শহরের ধানুকা মনসা বাড়ির একটি মন্দির ৫ আগস্ট ভেঙে দেওয়া হয়। দুই থেকে তিন ঘণ্টা ভাঙচুর চলে। ধানুকা মনসা বাড়ি মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চক্রবর্তী ৬ আগস্ট বলেন,‘হামলাকারীরা আমাদের বাড়ি ভাঙচুরের জন্য চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছিল। সেনাসদস্যরা আমাদের উদ্ধার করেছেন।’

সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে’
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বলছেন, যেসব জায়গায় হামলা হয়নি, সেখানেও মানুষ ব্যাপক আতঙ্কে ছিলেন। আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  বলেন, সুযোগ পেলে বাংলাদেশে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার চলে, তাঁদের সম্পদ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়। এবার একটি ইতিবাচক দিকও দেখা গেছে। সেটা হলো, অনেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে এগিয়ে গেছেন। এই ইতিবাচক দিকটিকে উৎসাহিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে ধর্ম বা জাতিগত পরিচয়ের কারণে কোনো ভেদাভেদ করা হবে না।’

[প্রতিবেদনটিতে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলার আমাদের ফ্রিডম সিলেট অনুসন্ধান টিম FSJ  প্রতিবেদক প্রতিনিধিরা ]

সিলেটে ফাহিম হ ত্যা কা ণ্ড নিয়ে যা জানালেন ভাই কামরান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ
সিলেটে ফাহিম হ ত্যা কা ণ্ড নিয়ে যা জানালেন ভাই কামরান

সিলেটে ফাহিম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন তার ভাই মো. মহসিন কামরান, পিতা মাওলানা আব্দুল আলীম ও চাচা আব্দুল হান্নান। এসময় গ্রামের সচেতন মহলের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩০ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে সিলেট মহানগরীতে নিজের কাজকর্ম সেরে ক্লান্ত ফাহিম আহমদ (২৭) বাড়ি ফিরেছিলেন। তার মা বাড়ি ছিলেন না। মাকে ডাকছিলেন তিনি। কিন্তু তখন পূর্ব শত্রুতার জেরে আপন ফুফু একই বাড়ির মো. জিলাল উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুমা বেগম ও তার দুই ছেলে সাইদ আহমদ (২৩) ও মাহিদ আহমদ (১৯) তার সঙ্গে ব্যাঙ-বিদ্রুপ শুরু করে। ফাহিম প্রতিবাদ করলে তারা আরও ক্ষেপে যান এবং গালাগাল করতে করতে ছুটে এসে কুলসুমা বেগম ও মাহিদ তার দুই হাত চেপে ধরেন। তখন সাঈদ তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। পরে বাড়ির অন্যান্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে গোলাপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ডাক্তার অবস্থা বেগতিক দেখে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাকে ভর্তি করা হলেও পরদিন ১ মে সকাল ৮টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফাহিম। পরদিন তার পিতা মাওলানা আব্দুল আলীম বাদী হয়ে কুলসুমা, সাঈদ ও মাহিদকে আসামী করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নং ৩/০২/০৫/২৫)। উপরের বিবরণটি তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

ঘটনার ৯দিন পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্রাম্মনবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে এক কলোনি থেকে কুলসুমা, সাঈদ ও মাহিদকে গ্রেফতার করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা কারাগারে।

তবে কুলসুমা বেগমের অপর ছেলে সৌদিআরব প্রবাসী জাকির হোসাইন এখনো তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি মামলা প্রত্যাহার না করলে আরও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর হুমকি দেয়ায় এখন গোটা পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। যখন তখন জাহিদের লোকজন তাদের উপর হামলা করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মহসিন কামরান বলেন, আমরা হুমকির প্রেক্ষিতে একটি জিডি দায়ের করেছি। তবে জাকির বিদেশে। তার কাছে প্রচুর টাকা-পয়সাও আছে। যখন তখন তার পক্ষ থেকে হামলার আশঙ্কায় আমরা শঙ্কিত। বিশেষ করে আমার বৃদ্ধ বাবা মা অসুস্থ। তাছাড়া এখন ফাহিমের শোকে গোটা পরিবারই মুহ্যমান। এ অবস্থায়  আমরা নিরাপত্তাহীন। আমি এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।

তিনি বলেন, আমার নির্দোষ ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসির দাবি জানাই। পাশাপাশি এর নেপথ্যে অন্য কেই আছে কি না আমরা জানিনা। গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে অন্য কেউ থাকলে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।

ফাহিমের পিতা মাওলানা আব্দুল আলীম বলেন, আমি ন্যায় বিচার চাই। জায়গা জমির মধ্যে বোনের প্রাপ্য অংশ আমরা অনেক আগেই তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপর তারা অযৌক্তিকভাবে আমাদের সঙ্গে বিরোধে লেগে থাকে। অযৌক্তিক দাবি করতে থাকে। পঞ্চায়েত মানেনা। এখন আমার যুবক ছেলেটাকে মেরেই ফেলেছে। আমার বোন কুলসুমা এবং তার দুই ছেলে সাঈদ ও মাহিদের ফাঁসি চাই। আমার স্ত্রীও আজ পুত্রশোকে কাতর। তারও একই দাবি।

ফাহিমের চাচা আব্দুল হান্নান বলেন, বোন ভাগ্নাদের নিয়ে কলোনিতে থাকতো ভাড়াটিয়া হিসাবে। তার শ্বশুর স্বামী জিলাল উদ্দিন ও তার সন্তানদের ত্যাজ্য করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। দেখে আমাদের কষ্ট হয়েছিল বলে বাড়িতে এনে আশ্রয় দিয়েছিলাম। পৈতৃক জায়গা থেকে বোনের অংশ বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তবু তারা সন্তোষ্ট হয়নি। নানাভাবে আমাদের হয়রানি করেছে এবং অবশেষে আমাদের সবার প্রিয় ভালোবাসার ফাহিমকে তারা ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য গ্রামবাসীরাও খুনীদের ফাঁসির দাবি ও মাওলানা আব্দুল আলীমের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা (২ মে)

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১২:২৪ অপরাহ্ণ
আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা (২ মে)

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে আজ মাঠে নামছে আবাহনী। আইপিএলে মুখোমুখি হবে গুজরাট ও হায়দরাবাদ। আছে পিএসএল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও জার্মান বুন্দেসলিগার ম্যাচও।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল

বসুন্ধরা কিংস–আবাহনী

বিকেল ৫–৩০ মি., টি স্পোর্টস

আইপিএল

গুজরাট–হায়দরাবাদ

রাত ৮টা, টি স্পোর্টস

পিএসএল

পেশোয়ার–ইসলামাবাদ

রাত ৯টা, নাগরিক টিভি

জার্মান বুন্দেসলিগা

হাইডেনহাইম–বোখুম

রাত ১২–৩০ মি., সনি স্পোর্টস টেন ২

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

ম্যানচেস্টার সিটি–উলভারহ্যাম্পটন

রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত সিলেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত সিলেট

মহান মে দিবস ও দু’দিন সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিনের ছুটিতে ভীড় জমেছে সিলেটের পযর্টন কেন্দ্রগুলোতে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ভ্রমন বিলাসীরা। আবাসিক হোটেলগুলোতে কিছুটা রুম সঙ্কট ও ভীড় চোখে পড়ার মতো। এতে কিছুটা ভোগান্তিতেও পড়েছেন অনেক পর্যটক।

সিলেট, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মনোরম জেলা। ঐতিহ্যবাহী সিলেট সবুজ চা বাগান, টিলাটালা, আদিম নদী, মহিমান্বিত জলপ্রপাত এবং পবিত্র স্থানগুলোর জন্য বিশ্বমণ্ডলে খুব পরিচিত। সিলেটকে বলা হয় পর্যটন নগরী। সিলেটে রয়েছে মন মাতানো অনেক পর্যটন স্থান। সবুজের সমারোহ আর টিলা বেষ্টিত পাহাড়, শীতল জল কোনো কিছুরই কমতি নেই সিলেটে।প্রকৃতিপ্রেমী ও ইতিহাসপ্রেমী কিংবা আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার অধিকারীরা সময়-সুযোগ পেলেই চলে আসেন সিলেটের বাতাস গায়ে মাখতে। এ অঞ্চলের রোমাঞ্চকর প্রাকৃতিক পরিবেশও দারুন উপভোগ্য।

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জাফলং চা বাগান, জাফলং আগুন পাহাড়, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, পাঙথুমাই জলপ্রপাত, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, লালাখাল, ডিবির হাওর, সংগ্রাম পুঞ্জি, লক্ষণছড়া, লোভাছড়া, অ্যালভিনা গার্ডেন, সোনাতলা পুরাতন জামে মসজিদ, মিউজিয়াম অব রাজাস, হাছন রাজার বাড়ি, নাজিমগড় রিসোর্ট, জকিগঞ্জ ত্রি-নদীর মোহনাসহ আরও বিভিন্ন মনোলোভা স্থান। এরমধ্যে সিলেট নগরী ও শহরতলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ওলিকুল শিরোমনী হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার, এমএজি ওসমানী মিউজিয়াম, লাক্কাতুরা চা বাগান, ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ, সুরমা পারে অবস্থিত ঐহিত্যবাহী আলী আমজদের ঘড়ি, কিনব্রিজ, জিতু মিয়ার বাড়িসহ এমন অনেক দর্শনীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে।

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর পার্শ্ববর্তী লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, তারাপুর ও দলদলি চা বাগানে ছিল উপছে পড়া ভীড়। কেউ কেউ প্রথমবারের দেখায় প্রেমে পড়েছেন চা বাগানের সৌন্দর্যের। কেউ কেউ প্রকৃতির ভালোবাসায় দুর-দূরান্ত থেকে বারবার ছুটে আসেন এই বাগানগুলোর সবুজে মিশে যেতে।

শ্রমিক দিবস ও সপ্তাহিক ছুটি ঘিরে সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনালে সকাল থেকেই মানুষের উপছে পড়া ভিড় দেখা গেছে। টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

পরিবহন কর্তৃপক্ষরা বলছেন, যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং বাস টার্মিনালে নিয়মিত মনিটরিংও করা হচ্ছে। সবরকমের বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সিলেটের বাইরে থেকে ঘুরতে আসা লোকজন যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সেই ব্যাপারেও সর্তকতা জারি করা হয়েছে।

সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট বিভাগে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই পর্যটক নির্ভর। মে দিবসের ছুটি ও সপ্তাহিক ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টগুলো পর্যটকে ভরপুর। সিলেটের বাইরের লোকজন আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখছেন। বিশেষত বড় হোটেল ও রিসোর্টগুলোর কোনো কক্ষই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আর ফাঁকা পাওয়া যায়নি।

সুদূর ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে সিলেটে ঘুরতে আসা সাব্বির আহমদ বলেন, আমি আসলে সরকারি চাকরি করি। সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি সিলেটের প্রেমে পড়ে যাই। তাই সংক্ষিপ্ত এই ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি প্রথমবার চা বাগানে এসেছি। এর আগে ছবিতে, ভিডিওতে যেরকম দেখেছি কিন্তু বাস্তবে এর রোমাঞ্চ আরো দ্বিগুণ। চা বাগানগুলো অত্যান্ত সুন্দর। সত্যিই চা বাগানের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করেছে।

মে দিবসের ছুটিতে নাজির বাজার থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা শামিম আহমদ বলেন, আমি সিলেটেরই বাসিন্দা। সিলেটের প্রকৃতি ও পরিবেশ আমার অনেক ভালো লাগে। সর্বাবস্থায় নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মানুষ সিলেটকে বেছে নেয়। আমি যখনই ছুটি পাই কিংবা সুযোগ পাই আমার পরিবার নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান উপভোগ করতে চলে আসি।

নারায়নগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা পারভীন বেগম বলেন, সিলেটে আমি ভাইয়ের বাসায় পরিবার নিয়ে এসেছি। এসেই লাক্কাতুরা চা বাগানে চলে এসেছি। আমার বিয়ের আগে এখানে একবার এসেছিলাম। বিয়ের পর স্বামী বা সন্তানরা এবারই প্রথম এসেছে এই বাগানে। তারাও উপভোগ করছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নজরদারি ও টহল পুলিশিং জারি রয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে না থাকলেও কেন্দ্রগুলোর বাইরে আমাদের পুলিশের টহল সবসময় আছে। কারো কোনো সমস্যা হলে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।