রমজানে সিলেটে যে দামে বিক্রি হবে গরু-খাসির মাংস ও মুরগী


আর কয়েকদিন পর শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাসে মাছ, মাংসের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। যার সুযোগ নেয় একটি অসাধু চক্র।
এবার এই চক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক)।
নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী পবিত্র রমজান মাসের জন্য গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসীর মাংস ১০০০ টাকা, মহিষ ৬৫০ টাকা, ছাগল/ভেড়া ৯৫০টাকা, সোনালী মুরগী ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করার কথা বলা হয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় নগরভবনের সভাকক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভা থেকে এই মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
আসন্ন রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষা, বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখা, আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সেহরী ও ইফতারের সময় সাইরেন বাজানো ব্যবস্থা সচল রাখা এবং পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) প্রশাসক ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) খান মো. রেজা-উন-নবী।
এসময় তিনি বলেন, পরিবর্তিত বাংলাদেশে কেউ আকাশ থেকে বা বাইরে থেকে এসে আমাদের সুন্দর দেশ নির্মাণ করে দেবে, এই স্বপ্ন না দেখাটাই সমিচীন। আমাদের দেশটাকে আমাদের নিজেদের সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে। আমাদের ভালো থাকার যে অনুসঙ্গ তার মধ্যে অন্যতম যে আমরা যেনো স্বস্তির মধ্যে থাকতে পারি। এই স্বস্তির মধ্যে রয়েছে বাজার মূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আমরা এবং আমাদের পরিবার ঘরে এবং বাইরে যেনো নিরাপদে থাকতে পারি। সবমিলিয়ে একটা স্বস্তির মধ্যে থাকতে পারি। আমাদের জীবনযাপন যেনো সুন্দর হয়।
নাগরিক হিসেবে আমরা যেভাবে থাকতে চাই, সেই চাহিদাটা আসলে সবার মধ্যে একই রকম। বিগত দিনে সমাজের যেসব কারণে আমরা কষ্ট পেয়েছি, আমরা সেসব থেকে যতটুকু সম্ভব কাটিয়ে উঠতে চাই। আমরা দ্রব্যমূল্যে নিয়ন্ত্রণ চাই, সেটা হোক কোনো সুপারশপ কিংবা খোলা বাজার। সমজের সকল শ্রেণীর মানুষ চায় জিনিসপত্রের দাম যেনো ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। এই সকল বিষয় নিশ্চিত করতে সিলেট সিটি কর্পোরেশন আপনাদের সকলের সহযোগিতা চায়।
সম্প্রতি সিসিকের ৪২টি ওয়ার্ডে ৩৫ হাজার টিসিবির কার্ড বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো কার্ড বিতরণ করা হবে। জনসাধারণের সুবিধার্থে খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় কার্যক্রম (ওএমএস) চালু রয়েছে।
তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাস সিয়াম, সাধনা, ত্যাগ ও সংযমের মাস। পবিত্র রমজানের পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্য যেন বহাল থাকে সে ব্যাপারে সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে। নগরবাসীর নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন, শহরের পরিচ্ছন্নতা, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং, রাস্তা ও ফুটপাত চলাচলের উপযোগী রাখা, নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ ও পানির সরবরাহ বিশেষ করে সেহরী ইফতার ও তারাবীহর সময়ে, এই বিষয়গুলোতে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করব।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন, পুলিশ-র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সকল দপ্তর একযোগে কাজ করবে। ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেনো সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। দোকান ও মার্কেটগুলোতে দ্রব্যমূল্যের তালিকা স্থাপন করবেন।
গরু, মহিষ, খাসী, ভেড়া ও মুরগীর মাংস নির্ধারিত দামে বিক্রি করবেন। ভেজালমুক্ত খাবার বিক্রি করবেন। রমজান মাসে সিটি কর্পোরেশন নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। ধর্মীয় ও সামাজিক দিক বিবেচনায় হোটেল ও রেষ্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের সঠিক সময়ে তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা ও বন্ধ রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। সিলেট আধ্যাত্মিক নগরী। তাই মাহে রমজানের পবিত্রতা বজার রাখার স্বার্থে সিনেমার পোষ্টার লাগানো, অযথা মাইকিং ও আপত্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
খান মো. রেজা-উন-নবী আরো বলেন, ছোটবেলায় পড়েছিলাম কেয়ামতের আগে নাকি ফুলে সুগন্ধ থাকবে না, ফলে কোনো স্বাদ থাকবে না। এখানে একজন বললেন, এখন নাকি চিনিতে পিপড়া বসে না। অর্থাৎ চিনিতেও ভেজাল। আপনারা খেয়াল করে দেখবেন অনেক ফুলের গন্ধ নাই। অনেক ফলমূলের স্বাদ কমে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন শুধু নিজেকেই ভালোবাসে। স্যোশাল মিডিয়ার একটা জগৎ তৈরি হয়েছে, সেখানে সবাই সবার বন্ধু।
প্রকৃতপক্ষে কি সবাই সবার বন্ধু হতে পারে? আপনার কাছের মানুষ যদি আপনার বন্ধু হতে না পারে, আপনি যদি তাদের ভালো না বাসতে পারেন তাহলে এই হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ র্ভাচুয়াল বন্ধু থাকার কোনো মূল্য নেই। দিন শেষে আপনাকে পৃথিবীর বাস্তবতায় ফিরতে হবে। যদি আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে যদি শান্তি সৃষ্টি করতে পারি তাহলে আমাদের জীবন শান্তিময় হবে।
আপনার মতামত লিখুন