আবার বাংলাদেশে প্রকাশ্যে জঙ্গি
       
খুঁজুন                
                               
সোমবার, ১৯ মে, ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২
           

আবার বাংলাদেশে প্রকাশ্যে জঙ্গি

কামরান আহমদ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ
আবার বাংলাদেশে প্রকাশ্যে জঙ্গি

বাংলাদেশে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা থেকে যেতে না যেতেই প্রকাশ্যে জঙ্গিদের দেখা যাচ্ছে।  গত কয়েকদিন পূর্বে যশোরের রাজারহাটে রামনগরের এক ওয়াজ মাহফিলে তাদেরকে অস্ত্র সহ বক্তব্য দিতে দেখাগেছে।

প্রশ্ন হলো সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কোথায় ছিল?
হটাৎ করে জঙ্গিরা কোথা থেকে এল?
নাকি জামাত বিএনপির ভিতরে জঙ্গি বসবাস?
বাংলাদেশ কি জঙ্গিদের তরফে বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছে? এ প্রশ্ন এখনও উঠছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করছে, ধর্মান্ধ চরমপন্থিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে তারা একই সঙ্গে বলছে, আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। এ শক্তি বাংলাদেশের উন্নতি-অগ্রগতি পছন্দ করে না। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় তাদের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য নয়। আফগানিস্তানে তালেবানি শক্তির ‘সাফল্য’ তাদের উৎসাহিত করে।
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জোট ক্ষমতায়। এ দিন দুপুরে বাংলাদেশ চমকে ওঠে, বিশ্বও। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার একটি বাদে সবগুলোর অন্তত পাঁচশতাধিক স্থানে বোমা হামলা ঘটে। কারা করল এ ভয়ংকর হামলা?ওই দিন বিকেলে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামী একটি সমাবেশের আয়োজন করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগী কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা-কর্মীদের নিয়ে গঠিত এ দলের নেতারা ৬৩ জেলায় বোমা হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বলেন, যারা দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের ঘাঁটি হিসেবে প্রমাণ করতে চায়, অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়; তারা সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছে।জামায়াতে ইসলামী নেতারা বলেন, যারা ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর বলেছিল চারদলীয় জোটকে একদিনের জন্যও শান্তিতে থাকতে দেব না, তারাই পরিকল্পিতভাবে এ হামলা চালিয়েছে। সমাবেশে বক্তৃতা করেন আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, এটিএম আজহারুল ইসলাম প্রমুখ। [প্রথম আলো, ১৮ আগস্ট, ২০০৫]

একইদিনে বিএনপি নেতারা মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দলের সারা দেশে হামলা চালানোর মতো লোকবল নেই। শেখ হাসিনা, আবদুল জলিল এবং সাবের হোসেন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করলেই এই ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হবে।’ [প্রথম আলো, ১৮ আগস্ট, ২০০৫]

ওই সময়ে রাজশাহী অঞ্চলের কয়েকটি স্থানে ধর্মান্ধ চরমপন্থিরা সংগঠিত হচ্ছে, এমন খবর সংবাদপত্রে আসছিল। কিন্তু চারদলীয় জোট সরকার সে সব আমলে নেয়নি। তারা তোতা পাখির মতো আউড়েই যাচ্ছিল- আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। এ জন্য বিদেশি চররাও তাদের সহায়তা দিচ্ছে।

আগের বছর ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার কয়েক মাস আগে ১ এপ্রিল আরেকটি উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেছিল- চট্টগ্রামে একটি সরকার পরিচালিত ইউরিয়া সার কারখানার জেটিতে চোরাইপথে বিদেশ থেকে আনা দশ ট্রাক অস্ত্র খালাস করতে চেয়েছিল একটি মহল। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ওই সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন একাত্তরের আলবদর বাহিনীর প্রধান এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য মতিউর রহমান নিজামী। পরবর্তী সময়ে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ সময় যেসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা হয়েছিল তা দিয়ে বড় ধরনের যুদ্ধ পরিচালনা করা সম্ভব ছিল।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নেতারা সে সময়েও এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের দায়ী করে বক্তব্য দিতে থাকে।

১৭ আগস্টের বোমা হামলার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তারের জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর দেশের সব থানায় নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু বাদ সাধে সাতক্ষীরার ‘এক ছিতাইকারী, এক মওলানা ও এক থানার ওসি’। ঘটনাটি ছিল এমন-

সাতক্ষীরার বোমা হামলা ঘটেছিল আদালতের পাশে। এক মাওলানা বোমাটি একটি পুটলির ভেতর রেখে একটু দূরে সরে যায়। আদালত অঙ্গনে পকেটমার পেশায় নিত্যদিন সক্রিয় থাকা এক তরুণ ওই পুটলাটি দেখে ফেলে। যে মাওলানা সেটি রেখেছিল, সে দূরে সরে যেতেই পকেটমার ভাবে, নিশ্চয়ই এর ভেতরে কিছু মিলবে। সে এগিয়ে যায় পুটলির দিকে, কিন্তু তখনই বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় সে মাওলানাকে দ্রুত পালিয়ে যেতে দেখে।ওই পকেটমার ঘটনাটি এক সাংবাদিককে বলে এবং সেই সাংবাদিক তাকে থানার ওসির কাছে নিয়ে যায়। ওসি ঘটনাটি শুনে টেপ রেকর্ড করে এবং অনেকটা জবানবন্দি হিসেবে সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়। ওসি মনে করেছিলেন- এমন ভয়ংকর অপরাধের রহস্য উৎঘাটনের জন্য সরকার থেকে তিনি বাহবা পাবেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে বিপরীত। একাধিক সংবাদপত্রে ঘটনাটি প্রকাশিত হলে ঢাকা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে ক্লোজ করে এবং কেন এমন ‘গোপনীয় বিষয় সংবাদপত্রে ফাঁস করে’- সেজন্য শোকজ করে।

‘ইসলামি জঙ্গিবাদের আত্মপ্রকাশ : ৬৩ জেলায় বোমাবাজি’ এমন শিরোনাম ছিল ২০০৫ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদপত্রে। এটা বিস্ময়ের, কোনো হামলাতেই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। তবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। কোনো সংগঠন এ হামলার দায়িত্ব স্বীকার তাৎক্ষণিকভাবে করেনি। তবে প্রতিটি বোমা হামলার ঘটনাস্থলের আশপাশে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন জেএমবির লিফলেট পাওয়া গিয়েছিল।

কয়েকদিন পর এ সংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে কয়েকজন সংবাদপত্রে জানায়, তাদের হাতে ভয়ংকর সব বোমা রয়েছে। ‘সময়মতো আমরা প্রকৃত শক্তির খেলা দেখাব’- এমন দম্ভোক্তিও কেউ কেউ করছিল।

বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তখন ‘হাওয়া ভবন’-এর দোর্ন্দণ্ড প্রতাপশালী ব্যক্তি। তার সঙ্গে জেএমবি এবং এ ধরনের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতাদের ঘনিষ্ঠতার কথা শোনা যাচ্ছিল। তিনি কি এ ঘটনার পেছনে? এমন প্রশ্নের পাশাপাশি আমাদের মনে পড়ে যাচ্ছিল এক বছর আগে ২১ আগস্টের ভয়ংকর গ্রেনেড হামলার স্মৃতি। সে দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে একের পর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়- স্পষ্টতই লক্ষ্য ছিল দলের সভাপতি ও জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের গোটা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হত্যা করা।

১৭ আগস্টের হামলার পরের কয়েকটি মাস আরও অনেক স্থানে হামলা হয়। ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বোমা হামলায় দু’জন বিচারক নিহত হন। ২৯ নভেম্বর গাজীপুর ও চট্টগ্রামে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় বোমা হামলায় ঘটনাস্থলের পাশ দিয়ে যাওয়া এক সাইকেলচালক নিহত হওয়ায় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর উল্লসিত হয়ে বলেছিলেন, ‘একজন হিন্দু জঙ্গির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।’ [প্রথম আলো, ৯ ডিসেম্বর, ২০০৫]

বোমা হামলায় নিহত সাইকেলচালক হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছিলেন, এটা জানার পর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এমন উদ্ভট মন্তব্য করেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তার লক্ষ্য ছিল জেএমবিকে আড়াল করা। তিনি বলতে চেয়েছেন- হিন্দুরাই বোমাবাজি করছে সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য এবং তাদের দিয়ে এ সব করাচ্ছে ভারত।

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ধর্মান্ধ জঙ্গিদের বেশিদিন আড়ালে রাখতে পারেনি। জনমত সোচ্চার হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকেও চাপ আসে। ২০০৬ সালের ৬ মার্চ জেএমবির অন্যতম শীর্ষনেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই গ্রেপ্তার হন। কিছুদিন পর দলের প্রধান নেতা শায়খ আবদুর রহমানও সিলেট থেকে গ্রেপ্তার হন। বিএনপির রাজনৈতিক ও আদর্শগত মিত্র হলেও এই চরমপন্থি দলের নেতাদের রক্ষা করতে পারেনি। তাদের শাসনামলেই কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর বিচারে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ ছয়জন শীর্ষ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এ সময় ক্ষমতায় ছিল ড. ফকরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন বিশেষ ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

এ ঘটনায় জঙ্গি অপশক্তি দুর্বল হয়েছিল, সন্দেহ নেই। তবে তারা নতুন করে সংঘটিত হয়। তারা বার বার নাম পালটাতে থাকে, কৌশলে পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিকভাবে নতুন পৃষ্ঠপোষক খুঁজে পায়। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়ংকর জঙ্গি হামলা ঘটে, যাতে জাপান ও ইতালির কজন নাগরিক নিহত হন।

বাংলাদেশ কি জঙ্গিদের তরফে বিপদ থেকে মুক্ত হয়েছে? এ প্রশ্ন এখনও উঠছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাবি করছে, ধর্মান্ধ চরমপন্থিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তবে তারা একই সঙ্গে বলছে, আত্মতুষ্টির অবকাশ নেই। এ শক্তি বাংলাদেশের উন্নতি-অগ্রগতি পছন্দ করে না। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় তাদের কাছে এখনও গ্রহণযোগ্য নয়। আফগানিস্তানে তালেবানি শক্তির ‘সাফল্য’ তাদের উৎসাহিত করে।

সংগত কারণেই জঙ্গিবাদী অপশক্তির প্রতি নজরদারি বাড়ানো সময়ের দাবি হয়ে উঠছে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে সক্রিয় রয়েছে এ ধরনের চরমপন্থি গোষ্ঠী। বাংলাদেশকে তাদের চারণভূমিতে যেন পরিণত করতে না পারে, এটা নিশ্চিত করতেই হবে।

সিলেটে ফাহিম হ ত্যা কা ণ্ড নিয়ে যা জানালেন ভাই কামরান

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১২ মে, ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ
সিলেটে ফাহিম হ ত্যা কা ণ্ড নিয়ে যা জানালেন ভাই কামরান

সিলেটে ফাহিম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন তার ভাই মো. মহসিন কামরান, পিতা মাওলানা আব্দুল আলীম ও চাচা আব্দুল হান্নান। এসময় গ্রামের সচেতন মহলের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

গত ৩০ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে সিলেট মহানগরীতে নিজের কাজকর্ম সেরে ক্লান্ত ফাহিম আহমদ (২৭) বাড়ি ফিরেছিলেন। তার মা বাড়ি ছিলেন না। মাকে ডাকছিলেন তিনি। কিন্তু তখন পূর্ব শত্রুতার জেরে আপন ফুফু একই বাড়ির মো. জিলাল উদ্দিনের স্ত্রী কুলসুমা বেগম ও তার দুই ছেলে সাইদ আহমদ (২৩) ও মাহিদ আহমদ (১৯) তার সঙ্গে ব্যাঙ-বিদ্রুপ শুরু করে। ফাহিম প্রতিবাদ করলে তারা আরও ক্ষেপে যান এবং গালাগাল করতে করতে ছুটে এসে কুলসুমা বেগম ও মাহিদ তার দুই হাত চেপে ধরেন। তখন সাঈদ তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। পরে বাড়ির অন্যান্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে গোলাপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। ডাক্তার অবস্থা বেগতিক দেখে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে তাকে ভর্তি করা হলেও পরদিন ১ মে সকাল ৮টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফাহিম। পরদিন তার পিতা মাওলানা আব্দুল আলীম বাদী হয়ে কুলসুমা, সাঈদ ও মাহিদকে আসামী করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (নং ৩/০২/০৫/২৫)। উপরের বিবরণটি তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

ঘটনার ৯দিন পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্রাম্মনবাড়িয়ায় অভিযান চালিয়ে এক কলোনি থেকে কুলসুমা, সাঈদ ও মাহিদকে গ্রেফতার করে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা কারাগারে।

তবে কুলসুমা বেগমের অপর ছেলে সৌদিআরব প্রবাসী জাকির হোসাইন এখনো তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এমনকি মামলা প্রত্যাহার না করলে আরও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর হুমকি দেয়ায় এখন গোটা পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। যখন তখন জাহিদের লোকজন তাদের উপর হামলা করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে মহসিন কামরান বলেন, আমরা হুমকির প্রেক্ষিতে একটি জিডি দায়ের করেছি। তবে জাকির বিদেশে। তার কাছে প্রচুর টাকা-পয়সাও আছে। যখন তখন তার পক্ষ থেকে হামলার আশঙ্কায় আমরা শঙ্কিত। বিশেষ করে আমার বৃদ্ধ বাবা মা অসুস্থ। তাছাড়া এখন ফাহিমের শোকে গোটা পরিবারই মুহ্যমান। এ অবস্থায়  আমরা নিরাপত্তাহীন। আমি এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাই।

তিনি বলেন, আমার নির্দোষ ভাইকে তারা হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসির দাবি জানাই। পাশাপাশি এর নেপথ্যে অন্য কেই আছে কি না আমরা জানিনা। গভীর অনুসন্ধানের মাধ্যমে অন্য কেউ থাকলে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।

ফাহিমের পিতা মাওলানা আব্দুল আলীম বলেন, আমি ন্যায় বিচার চাই। জায়গা জমির মধ্যে বোনের প্রাপ্য অংশ আমরা অনেক আগেই তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। এরপর তারা অযৌক্তিকভাবে আমাদের সঙ্গে বিরোধে লেগে থাকে। অযৌক্তিক দাবি করতে থাকে। পঞ্চায়েত মানেনা। এখন আমার যুবক ছেলেটাকে মেরেই ফেলেছে। আমার বোন কুলসুমা এবং তার দুই ছেলে সাঈদ ও মাহিদের ফাঁসি চাই। আমার স্ত্রীও আজ পুত্রশোকে কাতর। তারও একই দাবি।

ফাহিমের চাচা আব্দুল হান্নান বলেন, বোন ভাগ্নাদের নিয়ে কলোনিতে থাকতো ভাড়াটিয়া হিসাবে। তার শ্বশুর স্বামী জিলাল উদ্দিন ও তার সন্তানদের ত্যাজ্য করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। দেখে আমাদের কষ্ট হয়েছিল বলে বাড়িতে এনে আশ্রয় দিয়েছিলাম। পৈতৃক জায়গা থেকে বোনের অংশ বুঝিয়েও দিয়েছিলাম। তবু তারা সন্তোষ্ট হয়নি। নানাভাবে আমাদের হয়রানি করেছে এবং অবশেষে আমাদের সবার প্রিয় ভালোবাসার ফাহিমকে তারা ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য গ্রামবাসীরাও খুনীদের ফাঁসির দাবি ও মাওলানা আব্দুল আলীমের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান।

আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা (২ মে)

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১২:২৪ অপরাহ্ণ
আজ টিভিতে দেখা যাবে যেসব খেলা (২ মে)

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে আজ মাঠে নামছে আবাহনী। আইপিএলে মুখোমুখি হবে গুজরাট ও হায়দরাবাদ। আছে পিএসএল, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও জার্মান বুন্দেসলিগার ম্যাচও।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল

বসুন্ধরা কিংস–আবাহনী

বিকেল ৫–৩০ মি., টি স্পোর্টস

আইপিএল

গুজরাট–হায়দরাবাদ

রাত ৮টা, টি স্পোর্টস

পিএসএল

পেশোয়ার–ইসলামাবাদ

রাত ৯টা, নাগরিক টিভি

জার্মান বুন্দেসলিগা

হাইডেনহাইম–বোখুম

রাত ১২–৩০ মি., সনি স্পোর্টস টেন ২

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

ম্যানচেস্টার সিটি–উলভারহ্যাম্পটন

রাত ১টা, স্টার স্পোর্টস সিলেক্ট ১

মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত সিলেট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ
মে দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে মুখরিত সিলেট

মহান মে দিবস ও দু’দিন সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে টানা তিনদিনের ছুটিতে ভীড় জমেছে সিলেটের পযর্টন কেন্দ্রগুলোতে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছেন ভ্রমন বিলাসীরা। আবাসিক হোটেলগুলোতে কিছুটা রুম সঙ্কট ও ভীড় চোখে পড়ার মতো। এতে কিছুটা ভোগান্তিতেও পড়েছেন অনেক পর্যটক।

সিলেট, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি মনোরম জেলা। ঐতিহ্যবাহী সিলেট সবুজ চা বাগান, টিলাটালা, আদিম নদী, মহিমান্বিত জলপ্রপাত এবং পবিত্র স্থানগুলোর জন্য বিশ্বমণ্ডলে খুব পরিচিত। সিলেটকে বলা হয় পর্যটন নগরী। সিলেটে রয়েছে মন মাতানো অনেক পর্যটন স্থান। সবুজের সমারোহ আর টিলা বেষ্টিত পাহাড়, শীতল জল কোনো কিছুরই কমতি নেই সিলেটে।প্রকৃতিপ্রেমী ও ইতিহাসপ্রেমী কিংবা আধ্যাত্মিক চিন্তাভাবনার অধিকারীরা সময়-সুযোগ পেলেই চলে আসেন সিলেটের বাতাস গায়ে মাখতে। এ অঞ্চলের রোমাঞ্চকর প্রাকৃতিক পরিবেশও দারুন উপভোগ্য।

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- জাফলং চা বাগান, জাফলং আগুন পাহাড়, রাতারগুল, বিছানাকান্দি, পাঙথুমাই জলপ্রপাত, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, লালাখাল, ডিবির হাওর, সংগ্রাম পুঞ্জি, লক্ষণছড়া, লোভাছড়া, অ্যালভিনা গার্ডেন, সোনাতলা পুরাতন জামে মসজিদ, মিউজিয়াম অব রাজাস, হাছন রাজার বাড়ি, নাজিমগড় রিসোর্ট, জকিগঞ্জ ত্রি-নদীর মোহনাসহ আরও বিভিন্ন মনোলোভা স্থান। এরমধ্যে সিলেট নগরী ও শহরতলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ওলিকুল শিরোমনী হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরাণ (রহ.) এর মাজার, এমএজি ওসমানী মিউজিয়াম, লাক্কাতুরা চা বাগান, ঐতিহ্যবাহী শাহী ঈদগাহ, সুরমা পারে অবস্থিত ঐহিত্যবাহী আলী আমজদের ঘড়ি, কিনব্রিজ, জিতু মিয়ার বাড়িসহ এমন অনেক দর্শনীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে।

সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর পার্শ্ববর্তী লাক্কাতুরা, মালনিছড়া, তারাপুর ও দলদলি চা বাগানে ছিল উপছে পড়া ভীড়। কেউ কেউ প্রথমবারের দেখায় প্রেমে পড়েছেন চা বাগানের সৌন্দর্যের। কেউ কেউ প্রকৃতির ভালোবাসায় দুর-দূরান্ত থেকে বারবার ছুটে আসেন এই বাগানগুলোর সবুজে মিশে যেতে।

শ্রমিক দিবস ও সপ্তাহিক ছুটি ঘিরে সিলেটের কদমতলী বাস টার্মিনালে সকাল থেকেই মানুষের উপছে পড়া ভিড় দেখা গেছে। টানা তিন দিনের ছুটি পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।

পরিবহন কর্তৃপক্ষরা বলছেন, যাত্রীদের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে তারা কাজ করে যাচ্ছে এবং বাস টার্মিনালে নিয়মিত মনিটরিংও করা হচ্ছে। সবরকমের বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। সিলেটের বাইরে থেকে ঘুরতে আসা লোকজন যাতে কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হন সেই ব্যাপারেও সর্তকতা জারি করা হয়েছে।

সিলেটের হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিলেট বিভাগে ৫ শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই পর্যটক নির্ভর। মে দিবসের ছুটি ও সপ্তাহিক ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টগুলো পর্যটকে ভরপুর। সিলেটের বাইরের লোকজন আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখছেন। বিশেষত বড় হোটেল ও রিসোর্টগুলোর কোনো কক্ষই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আর ফাঁকা পাওয়া যায়নি।

সুদূর ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে সিলেটে ঘুরতে আসা সাব্বির আহমদ বলেন, আমি আসলে সরকারি চাকরি করি। সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় দেখে আমি সিলেটের প্রেমে পড়ে যাই। তাই সংক্ষিপ্ত এই ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি প্রথমবার চা বাগানে এসেছি। এর আগে ছবিতে, ভিডিওতে যেরকম দেখেছি কিন্তু বাস্তবে এর রোমাঞ্চ আরো দ্বিগুণ। চা বাগানগুলো অত্যান্ত সুন্দর। সত্যিই চা বাগানের প্রকৃতি আমাকে মুগ্ধ করেছে।

মে দিবসের ছুটিতে নাজির বাজার থেকে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে আসা শামিম আহমদ বলেন, আমি সিলেটেরই বাসিন্দা। সিলেটের প্রকৃতি ও পরিবেশ আমার অনেক ভালো লাগে। সর্বাবস্থায় নিরাপদ ভ্রমণের জন্য মানুষ সিলেটকে বেছে নেয়। আমি যখনই ছুটি পাই কিংবা সুযোগ পাই আমার পরিবার নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান উপভোগ করতে চলে আসি।

নারায়নগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা পারভীন বেগম বলেন, সিলেটে আমি ভাইয়ের বাসায় পরিবার নিয়ে এসেছি। এসেই লাক্কাতুরা চা বাগানে চলে এসেছি। আমার বিয়ের আগে এখানে একবার এসেছিলাম। বিয়ের পর স্বামী বা সন্তানরা এবারই প্রথম এসেছে এই বাগানে। তারাও উপভোগ করছে।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সব রকমের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। নজরদারি ও টহল পুলিশিং জারি রয়েছে। বিনোদন কেন্দ্রের ভেতরে না থাকলেও কেন্দ্রগুলোর বাইরে আমাদের পুলিশের টহল সবসময় আছে। কারো কোনো সমস্যা হলে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।