দেশ থেকে পালানোর জন্য নিরাপদ রুট হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বেছে নিয়েছেন সিলেট সীমান্ত। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানো শুরু করেন ক্ষমতাচ্যূত দলের নেতাকর্মীদের।
ইতোমধ্যে মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ কয়েক শ’ নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধি সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর খবর পাওয়া গেছে। অনেকে ভারত হয়ে চলে গেছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিলেট হয়ে ভারতে যাওয়ার গুঞ্জন ওঠেছে।

সূত্র জানায়, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ওইদিনই সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী পালিয়ে যান। এরপর থেকে শুরু হয় সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ। সিলেট সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় থাকা চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের সহযোগিতায় প্রভাবশালী নেতারা ভারতে পাড়ি জমাতে থাকেন।
শুরুতে চোরাচালানের সাথে জড়িত ছাত্রলীগ নেতারা এই কাজে সহযোগিতা করতেন। পরে চোরাকারবারি সিন্ডিকেটই সীমান্ত পারাপারের একক দায়িত্ব নেয়। সীমান্ত পেরিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা প্রথমে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং যান। পরে ধীরে ধীরে অনেক নেতা বিভিন্ন দেশে পাড়ি দেন। আর বাকিরা ভারতের শিলং, গুয়াহাটি ও কলকাতায় আশ্রয় নেন।
সর্বশেষ গুঞ্জন ওঠে গত ৫ নভেম্বর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সীমান্ত পেরিয়ে তিনি পৌঁছান শিলং। পরে সেখান থেকে যান গুয়াহাটি। কয়েকদিনের মধ্যে কলকাতা হয়ে তিনি দিল্লি যাওয়ার কথা রয়েছে বলে ভারতে অবস্থানরত এক নেতা জানিয়েছেন।
এদিকে, সিলেট সীমান্ত দিয়ে দালালের মাধ্যমে ভারতে যাওয়ার সময় গত সাড়ে ৩ মাসে শতাধিক লোক আটক হয়েছেন। গত ২৩ আগস্ট পালানোর সময় কানাইঘাটের ডনা সীমান্ত থেকে আটক হন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ২৯ আগস্ট সিলেট সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করে শিলং যাওয়ার পথে মারা যান কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় গোয়াবাড়ি সীমান্ত দিয়ে পালানোর সময় আটক হন জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ।
এ ছাড়া, গত ১২ সেপ্টেম্বর দোয়ারাবাজার সীমান্তে ১৯ লাখ ভারতী রূপিসহ এক যুবক, একই দিন কানাইঘাট সীমান্ত থেকে আরেক যুবককে আটক করে বিজিবি। ২২ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুর সীমান্ত থেকে ৬ জন, ২৪ সেপ্টেম্বর কানাইঘাটের মিকিরপাড়া সীমান্ত থেকে চারজনকে আটক করা হয়। ৫ অক্টোবর মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর সীমান্ত থেকে ৫ জন, ৮ অক্টোবর গোয়াইনঘাট উপজেলার রাণীরঘাট সীমান্ত থেকে ৩ জন, ৯ অক্টোবর একই সীমান্তে ৪ জন আটক হন।
১২ নভেম্বর জাফলংয়ের মায়াবী ঝর্ণা এলাকা দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় আটক করা হয় ৪ জনকে, একই দিন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার সস্তামোড়া সীমান্ত থেকে এক যুবককে, ২৯ অক্টোবর একই উপজেলা থেকে ৮ জন ও পরদিন ৩০ অক্টোবর মোহনপুর সীমান্ত থেকে দুইজনকে আটক করে বিজিবি। ১৯ অক্টোবর মাধবপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর সময় ৬ জনকে আট করা হয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের চোরাকারবারী ও মানবপাচারকারী চক্র মিলে সীমান্ত পারাপারের চুক্তি করে থাকে। চুক্তি অনুযায়ী টাকা পেলেই তারা অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশের চক্র সীমান্ত পার করে ওই চক্রের ভারতীয় সদস্যদের হাতে তাদেরকে হস্তান্তর করে।