মৌলিভীবাজার বড়লেখায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী ও ধর্মীয় সম্প্রীতির সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতা উপস্থিত থাকায় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার (৯ জুন) দুপুরে বড়লেখা পৌরশহরের ইসলামী ব্যাংক প্রাঙ্গণে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদ পুনর্মিলনী ও ধর্মীয় সম্প্রীতির এ সভা। সভায় তিনি বলেন, “জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশের কোনো নাগরিককে অধিকার আদায়ের জন্য দাবি করতে হবে না। অধিকার ঘরে ঘরে পৌঁছে যাবে।” এছাড়াও তিনি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার প্রতীক হিসেবে দেখতে চান বলে মন্তব্য করেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের উপস্থিতিতে বড়লেখায় আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৩ টায় স্হানীয় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ধর্মীয় সম্প্রীতির সভায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট গোপাল দত্ত, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি ডা. মুক্তা লাল, দাসেরবাজার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন চক্রবর্তী, দক্ষিণভাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রঞ্জিত পাল, বড়লেখা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শৈলেন্দ্র দেব নাথ ও সহসভাপতি কিন্ময় দত্তসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় নেতা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ সভাকে ধর্মীয় সম্প্রীতির অংশ হিসেবে দেখানো হলেও আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ বলছেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অঙ্গীকারের বিপরীতে জামায়াতের মঞ্চে আওয়ামী লীগের নেতারা কেন?” অন্যদিকে কেউ কেউ একে ধর্মীয় সহাবস্থানের ইতিবাচক দিক বলেও উল্লেখ করছেন।
একজন অংশগ্রহণকারী সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, “আমি জামায়াতে ইসলামীর মঞ্চে বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি দেখে বিমোহিত। যদি জামায়াত সত্যিই ধর্মনিরপেক্ষতার দিকে এগোয়, তাহলে তাদের অভিনন্দন জানাই।” তবে তিনি সতর্ক করে আরও লিখেছেন, “ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা দুটি ভিন্ন বিষয়। সংবিধান অনুযায়ী, সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করাটাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
বিভিন্ন পোস্টে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, সভায় সংখ্যালঘুদের উপস্থিতি কী স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, নাকি কোনো রাজনৈতিক চাপ বা মামলার ভয় দেখিয়ে সংগঠিত করা হয়েছে? তবে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কিংবা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী নেতারা বলেন, “আমরা সব ধর্মের মানুষকে নিয়ে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে এগোচ্ছি। মদিনা সনদের আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে সকল ধর্মের মানুষের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।”
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ছিল অনেক বেশি। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, “এটি হয়তো একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ইঙ্গিত, কিন্তু এর পেছনে রাজনৈতিক কৌশল বা বাস্তবতা কী—তা সময়ই বলে দেবে।”
এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জামায়াতের মঞ্চে একটি নিষিদ্ধ বা বিতর্কিত দলের নেতাদের উপস্থিতি রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্নের জন্ম দেয়।
সভা ও তা ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্ক বড়লেখা ছাড়িয়ে এখন জাতীয় পর্যায়েও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।