মিথ্যা অভিযোগে মানবপাচারের মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ২টায়

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে এমন অভিযোগ তুলে ধরেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে ইকবাল হোসেন।

 

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন- একই গ্রামের আবুল হকের ছেলে আলী হোসেন ২০১৫ সাল থেকে লিবিয়া প্রবাসী। তারা পিতা-পূত্র মিলে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে এলাকার অবস্থাসম্পন্ন ছেলেদের লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা আদায় করে। তাদের নির্যাতনে ইতিমধ্যে দু’জন গ্রামবাসী লিবিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের একজন, একই গ্রামের তরিকুল ইসলামের ছেলে একওয়ান ২০২২ সালে লিবিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং দেশের প্রথম সারির গণমাধ্যমে সেই সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ হয়। পরে আলী হোসেনের পিতা আবুল হক ও মা আছমা বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

 

একই গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে সফিক উদ্দিনও (৪২) আলী হোসেনের মাধ্যমে ইউরোপের নামে লিবিয়ায় যান এবং পাচারকারীদের নির্যাতনে মৃত্যুবরণ করেন। সফিকের পরিবার নিরিহ এবং সামর্থ্যহীন হওয়ায় আবুল হকের প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে অসহায় বোধ করায় তিনি কোনো মামলাও দায়ের করতে পারেননি।

নিজের এসব অপকর্ম ঢাকতে এবং একটি মহলের প্ররোচণায় গত ২৭ নভেম্বর মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে নিজের লিবিয়া প্রবাসী ছেলে আলী হোসেনকে জিম্মি করার মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে ইকবালের চাচা শ্রীধরপাশা গ্রামের ফয়সল মিয়াসহ ১২ জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন আবুল হক।

 

মামলার অন্য কয়েকজন আসামি হলেন- মকবুল হোসেন (৫০), হাছান নূর (৪০), সাইফুল ইসলাম (২৮), ছালাতুর রহমান (৩৫), সিরাজুল ইসলাম (৪৫), সামসুল ইসলাম (৪৫), নজরুল ইসলাম (৪০) ও জিলু মিয়া (৪২)।

 

ইকবাল সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন-  কেবলমাত্র হয়রানি ও ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং স্থানীয় একটি মহলের প্ররোচণায় তিনি এ মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি অভিযোগটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৭ নভেম্বর সিলেট মানবপাচার অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের শ্রীধরপাশা গ্রামের ফয়ছল মিয়ার (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের আবেদন করেন একই গ্রামের মৃত আছদ্দর আলীর ছেলে আবুল হক। পরে আবেদনটি আমলে নিয়ে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

মামলার এজাহারে উল্লেখ, আবুল হকের ছেলে আলী হুসেনকে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে মাফিয়া চক্র দিয়ে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে ভিডিও চিত্র ধারন করে সেই ভিডিও মা-বাবার কাছে পাঠিয়ে ফয়ছল ও তার সহযোগী মকবুল হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। টাকা নিয়েও ফয়ছল তার লিবিয়ার এজেন্টদের কাছ থেকে আলী হোসেনকে ছাড়িয়ে নিয়ে আসেননি, বরং আরো ১০ লাখ টাকা দাবি করে আলী হোসেনের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

 

অবশেষে ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতে ২৭ নভেম্বর সিলেট মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে ফয়ছল ও  মকবুলসহ মানবপাচারকারী চক্রের ১২ সদস্যের নাম উল্লেখ করে মামলার আবেদন করেন আবুল হক। আভিযোগটি আমলে নিয়ে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানাপুলিশকে এফআইআরের নির্দেশন দেন আদাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইফুর রহমান। পরে সেটি (সি.আর মামলা নং ৬১) কোতোয়ালি থানায় রেকর্ড হয়।

মামলার বাদী আবুল হক ওইদিন সিলেটভিউ-কে বলেন- ফয়ছল ও মকবুল এবং তাদের সহযোগিরা শুধু আমার ছেলেই নয়- সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৭০-৮০ জন যুবককে  ইতালি নেয়ার কথা বলে লিবিয়ায় নিজস্ব মাফিয়া এজেন্টদের কাছে আটক রেখে ফয়ছল ও মকবুল ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। বাধ্য হয়ে আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি, আমার ছেলেকে জীবিত ফেরত পেতে সংশ্লিষ্ট সকল দ্প্তরকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জোর দাবি জানাচ্ছি।