সিলেটে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) এর দায়েরকৃত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় ৪ আসামীকে ৮৭ কোটি আশি লক্ষ টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন সিলেট বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সিলেট বিভাগীয় বিশেষ আদালতের বিচারক মো.শাহাদাৎ হোসেন প্রামাণিক মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) (৩) ধারায় এই রায় ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মোঃ জাহিদুল ইসলাম।
মামলায় দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিলেট শাহজালাল উপশহরের স্পিং গার্ডেন ব্লক জি এর ৭ তলা ও ব্রিটেনের ১০ অকল্যান্ড রোড, ইস্ট সাউথ সি, হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা আব্দুর রহিম ও তাহেরুন্নেছার পুত্র মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরী। মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরীর স্ত্রী শাহিদা বেগম শান্তি। বিয়ানীবাজার ছোটদেশের আসদ আলীর পুত্র আব্দুল খালেক ওরফে মাখন উদ্দিন। সিলেটের গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণের উত্তর রায়গড় গ্রামের মৃত সিরাজ উদ্দিন ও রহিমা খাতুনের পুত্র ও মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরীর শ্যালক রিপন সিরাজ।
এর মধ্যে মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরী (ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী) আট বৎসরের সশ্রম কারাদন্ড, তার স্ত্রী শাহিদা বেগম শান্তি ও শ্যালক রিপন সিরাজ,আব্দুল খালেক ওরফে মাখন উদ্দিন কে চার বৎসর করে সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। অর্থদণ্ড পরিশোধের জন্য আগামী বছরের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ পর্যন্ত আওময় বেধে দেওয়া হয়েছে।অন্যথায় প্রত্যেককে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।এর মধ্যে শাহিদা বেগম শান্তি পলাতক রয়েছেন। বাকী আসামীদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রায় সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস থেকে প্রেরিত একটি পত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক মিসবাহ উদ্দিন ওরফে রবিন চৌধুরীর বিষয়ে বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স ইনটেলিজেন্স ইউনিট কর্তৃক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।অনুসন্ধানে মিসবাহ উদ্দিন কর্তৃক মর্টগেজ ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ একাধিক ব্যাংক শাখার মাধ্যমে দেশে আনয়ন করে বিভিন্ন ব্যাংক শাখায় তাহার নিজের নামে, স্ত্রী শাহিদা বেগম শান্তি ও পিতা আবদুর রহিম এর নামে টাকা স্থানান্তর করিয়া এফডিআর-এ বিনিয়োগ, এসওডি ঋণ গ্রহণ, শেয়ার ক্রয়, ফ্ল্যাট ক্রয়, শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ সহ বিভিন্ন ব্যাংকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং করেছেন মর্মে অনুমিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্ বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্স ইনটেলিজেন্স ইউনিট (BFIU) কর্মকর্তা প্রতিবেদন দাখিল করেন এবং উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসামিগণের বিরুদ্ধে দুদক কর্তৃক অত্র মামলাটি দায়ের করা হয়।যার মামলা নং কোতয়ালী (সিলেট) জিআর নং ১২৭/২০১৫, বিশেষ মামলা নং ০১/২০১৬।
এরপর মামলাটি তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা দূর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়, ঢাকা এর উপপরিচালক মোঃ ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী গত ০১/০২/২০১৬ তারিখে ০৫ জন আসামির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) (৩) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্র দাখিলের পর চার্জশীট বর্ণিত আসামি আব্দুর রহিম মৃত্যু বরণ করায় গত ১৪/০৫/২০১৭ তারিখের আদেশে তাহার বিরুদ্ধে মামলাটি Abate এর আদেশ প্রদান করা হয়।এরপর দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ আই রায় দেন বিচারক।
দুর্নীতি দমন কমিশন আদালতের কোর্ট পরিদর্শক মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, দুদকের করা মামলার রায়ে আজকে আসামীদের ৮৭ কোটি টাকার উপরে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। যা এ যাবতকালের সিলেটে সবচেয়ে বড় অর্থদণ্ড।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের প্রাক্তন পরিচালক মোঃ ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিউকিউটর ইবনে আলী মোঃ লুৎফুল কিবরিয়া শামীম।
সম্পাদক : আবু সালেহ মোঃ ইউসুফ
প্রকাশক : কামরান আহমদ
উপদেষ্টা : সালেহ আহমদ
ফিডম সিলেট - @ কপিরাইট | ২০২৫