সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কাজ করেও টাকা পাচ্ছেন না ঠিকাদাররা। এমনকি দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও জামানতের টাকা পাচ্ছেন না তারা। অ
ন্যদিকে; উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বরাদ্দও কমে যাচ্ছে। বাতিল হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্পও।
ঠিকাদাররা জানিয়েছেন- গত ৫ মাসে তাদের প্রায় ৩৫-৪০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। এরমধ্যে রয়েছে বিল ও জামানতের টাকা। তহবিল সংকটের অজুহাত দেখিয়ে টাকা ছাড় দেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- বর্তমান প্রশাসক সময় কম দেয়ার কারণে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত আবেদনে সিটি করপোরেশনের নানা বিষয় জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।
তারা জানিয়েছেন- বারবার ধরনা দিয়েও কাজের জন্য জামানত রাখা অর্থও ফেরত পাচ্ছেন না। আগস্টে সরকার পতন হলে বিভিন্নস্থানে উন্নয়ন কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছিল। তবে সিসিকের ঠিকাদার এসোসিয়েশন সকল কার্যক্রম চলমান রাখে। কিন্তু মেয়রের পরিবর্তে গত ৫ মাস ধরে প্রশাসক কর্তৃক সিসিক পরিচালিত হলেও এখন পর্যন্ত পূর্বে সম্পন্নকৃত সকল কাজের এবং চলমান সম্পন্ন কাজের কোনো বিল দেয়া হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর সিসিকের প্রকৌশল বিভাগ সাইড পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পরও কোনো বিল দেয়া হচ্ছে না। বিল না পাওয়ায় ঠিকাদাররা পড়েছেন আর্থিক সংকটে। একদিকে চলমান কাজের মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিল পরিশোধের চাপ, কর্মরত শ্রমিকদের মজুরি, ব্যাংক থেকে উত্তোলিত ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ। সবকিছু মিলিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ঠিকাদাররা।
সিলেট সিটি করপোরেশন কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সভাপতি মাসুম ইফতেখার রসুল শিহাব জানিয়েছেন- ‘৫ই আগস্টে পূর্বে সম্পন্ন হওয়া কাজের লিখিত ও স্বাক্ষরিত বিলের টাকাও এখনো পাইনি। ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে থাকেন। সময়মতো বিলের টাকা না পাওয়ায় একদিকে ব্যাংকের সুদ বাড়ছে। অপরদিকে সিআইবি রিপোর্টও খারাপ হচ্ছে। সিআইবি রিপোর্ট খারাপ হলে ভবিষ্যতে ব্যাংক ও আমাদের কোনো ঋণ দেবে না। তাই বিলের টাকা না পেলে চলমান সকল কার্যক্রম বাধ্য হয়েই বন্ধ রাখতে হবে। ফলে জনদুর্ভোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- সিলেট সিটি করপোরেশনের বিভাগীয় কমিশনারকে অতিরিক্ত দায়িত্বে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাই প্রশাসক নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর সিসিকের জন্য সময় বের করেন। জনপ্রতিনিধিরা যেভাবে সময় ম্যানেজ করতে পারেন প্রশাসকের পক্ষে সেভাবে সময় বের করা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় সকল কাজ পরিদর্শন শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। যেকোনো বিলের অনুমোদনের জন্য প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা সরজমিন পরিদর্শন করেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তারপর বিল অনুমোদন করা হয়। সেখানে ধীর গতি রয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন কন্ট্রাক্টর ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক এনায়েত আহমেদ রনি জানিয়েছেন- ‘এখন কাজ বন্ধ রাখা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ খোলা নেই। সব স্থানে কাজ বন্ধ রাখলেও একমাত্র আমরা সিলেটের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নগরীতে কোনো কাজ বন্ধ রাখিনি। কিন্তু কাজ সম্পন্ন করার পরও বিল পরিশোধ না করাটা আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের চিফ ইঞ্জিনিয়ার নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন- বিল ও জামানতের টাকা আটকে থাকার কথা সত্য। সিলেট সিটি করপোরেশনের বর্তমানে একটি বডি রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে- সিলেট সিটি করপোরেশনে বর্তমানে বরাদ্দও কমে গেছে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের তহবিলও কমছে। এতে করে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কর্মকর্তাদেরও। এই অবস্থায় নগরের উন্নয়নে নেয়া ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল হয়ে গেছে। সাবেক পরিষদ নগরের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। ২০২৪ সালের এপ্রিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৭শ’ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প জমা দিয়েছিল। সড়ক, ড্রেন, ছড়া-খাল, কালভার্ট, ওয়াকওয়ে, স্ট্রিট লাইট, ফুটপাথসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ পরিচালনার জন্য প্রথমে ২৭০০ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেয়া হয়। পরে সেটি কমিয়ে আড়াই হাজার কোটি টাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সেই প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। দুই দফা বন্যায় নগরীর রাস্তাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ক্ষতও সামাল দিতে পারেনি সিলেট সিটি করপোরেশন। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হয়েছিল ৫৮৮ কোটি টাকা। বিপরীতে বরাদ্দ আসে মাত্র ২ কোটি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকার জানিয়েছেন- প্রকল্প বাতিল হয়েছে। প্রকল্প বাতিল হলে অন্য কোনো ভাবে প্রকল্প আসবে। তখন কাজ হবে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমানে নতুন বর্ধিত এলাকায় ১৪০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। তিনি বলেন- বর্তমান প্রশাসকের অনেক কাজ। এরপরও তিনি সময় বের করে সিটি করপোরেশনে সময় দিচ্ছেন। যেসব কাজ আটকে আছে সেগুলো দ্রুত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সম্পাদক : আবু সালেহ মোঃ ইউসুফ
প্রকাশক : কামরান আহমদ
উপদেষ্টা : সালেহ আহমদ
ফিডম সিলেট - @ কপিরাইট | ২০২৫